রিপোর্ট : রফিকুল ইসলাম
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে উত্তরায়ণ একাডেমি ও বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলা আমার প্রাণের ভাষা, আমার অহংকার শ্লোগান সামনে রেখে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এই আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এম.পি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মফিজুর রহমান ও বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রিয়াংকা হালদার শিখা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উত্তরায়ণ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী লিলি ইসলাম।
তার আগে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চিত্রাঙ্কন ও ১৮ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে সঙ্গীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আজ অনুষ্ঠানে এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবনদানকারী শহীদদের ও সেই সঙ্গে ভাষা সংগ্রামের ত্যাগী অন্যসব কৃতী সন্তানদের প্রতি অতল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বলেন, ভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বাঙালি ঠিক করে নিয়েছিলো তার সাংস্কৃতিক আত্ম-পরিচয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী, একাধিক সামরিক সরকার উল্টোপথে চলেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কণ্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ চলছে প্রগতির পথে। এই সাহসীকার নেতৃত্বে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে দেশ সামনে, আরো সামনে এগিয়ে যাবে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে আরো সরব হতে হবে। আজ উত্তরায়ণ একাডেমীর এই অনুষ্ঠানটি হচ্ছে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গনে। এই বিদ্যানিকেতন পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষকে উত্তরায়ন একাডেমীকে আরো বেশি ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। কারন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের ধারাকে বেগবান করতে হবে। সংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে নিতে উত্তরায়ণ একাডেমীর অবিরত প্রচেষ্টা আমাদের উৎসাহিত করে।
আজ এ অনুষ্ঠানেআমি অংশ নিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমি আমার মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য যতটুকু সম্ভব সহায়তা দিতে চেষ্টা করবো। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী লিলি ইসলাম জানান, বাংলা সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসার নিযে কাজ করার লক্ষ্যে উত্তরায়ণের জন্ম হয়েছে ২০১০ সালে। স্বপ্নে ভরা এই ‘উত্তরায়ণ’। রাজধানীর বনানী-গুলশান-বারিধারা একটি উন্নত এলাকা। এখানকার সিংহভাগ মানুষই বিত্তবান। অথচ এখানে সংস্কৃতি চর্চার জন্য কোন স্কুল বা একাডেমি তৈরী হয়নি। দু-একটি ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান আছে যা পর্যাপ্ত নয়। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের সন্তানদের যদি সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলা ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত না রাখি তবে তাদের সঠিক পথ কেমন করে দেখাবো? মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন একজন মানুষ হিসাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হলে আমাদের দেশ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাদের অবহিত করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে বনানী বিদ্যানিকেতনে উত্তরায়ণ একাডেমি গান-নাচ-ছবি আঁকা-তবলা- গীটারের পাশাপাশি যোগ ব্যায়াম ক্লাস শুরু করেছে। তার মতে, সাহস ও মনোবল উত্তরায়ণের পুঁজি, কন্ঠ তাদের সম্পদ। এই দু-এর সমন্বয়ে উত্তরায়ণের প্রত্যেক সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন। উত্তরায়ণ একাডেমি প্রতিষ্ঠিত করার প্রধান উদ্দেশ্য বাংলা সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়া প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, অন্তর থেকে অন্তরে। দেশাত্মবোধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উদ্ধুদ্ধ করা উত্তরায়ণের একটি সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। তিনি বলেন, সংস্কৃতির চর্চা ছাড়া একজন মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। অমর একুশে উপলক্ষে এই আয়োজনে আলোচনা সভার পর অনুষ্ঠিত হয় ‘আমি বাংলায় গান গাই” শীর্ষকসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী। পুরো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন উত্তরায়ণ একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক লিলি ইসলাম।