মাহমুদুল হাসান সুজন:
সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধের জন্য এবং সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে দ্রুত মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার খোলার দাবিতে ৩১শে মে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন বায়রা সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোট।
বায়রার সাবেক সভাপতি মোঃ আবুল বাসার এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ককাস এর সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এম.পি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ককাসের মহাসচিব মিসেস মাহজাবিন খালেদ,বায়রার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ নুর আলী, ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহমেদ বুলবুল, বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী,বায়রার সাবেক মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরি নোমান,বায়রার সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি টিপু সুলতান সহ বায়রার সাবেক অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন,
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি প্রায় সাড়ে তিন বছর বন্ধ থাকার পর সরকারের নির্দেশনায় ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ সালে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের খবর সবাইকে আশাবাদী করেছিল। কিন্তু গত ২০১৬-২০১৮ এর মত সিন্ডিকেট নামধারী উভয় দেশের কিছু লোকের প্ররোচনায় ১৯শে ডিসেম্বর ২০২১-এ দুই দেশে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ধারা পাশ কাটিয়ে মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রী ১৪ই জানুয়ারি ২০২২ তারিখে ২৫ টি রিক্রুটিং এজেন্সীর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরনের একটি প্রস্তাব আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বরাবর প্রেরণ করেন। মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রীর দেয়া ওই চিঠির প্রতিউত্তরে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এম.পি ILO এর সনদ এবং বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ এর বরাত দিয়ে ১৮ জানুয়ারি ২০২২ এর চিঠিতে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার
সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সিকে কাজ দিতে পারে না। বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী বৈধ লাইসেন্সধারী সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সমান সুযোগ দিতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বচ্ছ, অনিয়মমুক্ত এবং নিরাপদ অভিবাসন চায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি কর্মী
পাঠানোর প্রক্রিয়া ঠিক করার জন্য দুই দেশের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের প্রস্তাবও দিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও
বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর এই অবস্থানকে দেশে-বিদেশে সকল মহল স্বাগত জানায় ।
মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের কারনে শ্রমবাজারে সৃষ্ট জটিলতা, অনিয়ম এবং অন্যান্য দেশের সাথে মালয়েশিয়ার অভিবাসনের প্রক্রিয়া কেমন
তা সদয় অবগতির জন্য সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন তা হলো !
১। ২০১৮ সালে ভ্রামবাজার বন্ধের কারণঃ
২০১৬ সালে BESTINET SDN BHD এর নিয়ন্ত্রনাধীন FWCMS নামক অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে মাত্র ১০টি এজন্সি নিয়ে চালু হওয়া শ্রমবাজারটি অনিয়ম, দূর্নীতি ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কারনে মাত্র দেড় বছরের মাথায় কর্মী প্রেরন বন্ধ হয়ে যায়।
এখানে উল্লেখ্য যে উক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে সিষ্টেম প্রোভাইডার ১০৫ রিঙ্গিত (প্রায় ২১০০ টাকার সমমান) নিয়োগকর্তার কাছ থেকে নেয়ার কথা থাকলেও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশী বংশদ্ভূত দাতো শ্রী আমিন ও বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক অংশীদার রুহুল আমীন স্বপন এই অর্থ
প্রায় ৫০ গুন বাড়িয়ে বাংলাদেশী গরীব ও নিরীহ কর্মীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে বিপুল পরিমান টাকা যা দেশি ও বিদেশী বিভিন্ন
সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে। ফলে মালয়েশিয়ার তৎকালীন মাহাথির সরকার এই সিন্ডিকেটের সিস্টেম দুর্নীতির কারনে ২০১৮
সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই দাতুশ্রী আমিনের সিস্টেম বাতিল করে।
বাংলাদেশ সরকার কম খরচে ও অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্সিকে সম্পৃক্ত করে শ্রমিক পাঠানোর নির্দেশনা দিলেও সিস্টেমের অনিয়ম
ও দূর্নীতির কারনে ১২লক্ষ কর্মী প্রেরনের কথা থাকলেও তার ২৫% পাঠানোও সম্ভব হয় নি।
২। মাইগ্রেশন খরচঃ
বাংলাদেশে মাইগ্রেশন খরচ বেশি হয় শুধু মাত্র সিন্ডিকেট ব্যবস্থার কারনে। অন্যান্য দেশে ওপেন মার্কেট পলিসি তে সকল রিক্রুটিং
এজেন্সি কর্মী প্রেরনে অংশ গ্রহণ করে। ফলে প্রতিযোগিতা মুলকভাবে মাইগ্রেশন খরচ কমে যায়। উচ্চ অভিবাসন খরচে একজন কর্মী বিদেশে গিয়ে ৩বছরেও তার লগ্নি করা টাকা তুলতে পারেনা। অর্থাৎ কর্মী বিদেশ যাওয়ার পূর্বেই যেই অর্থ পাচার হয়ে যায় তা
তিন বছরেও রেমিটেন্স হিসেবে ফেরত আসেনা।
৩। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন:
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণ হলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছ, ন্যায্য, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের ব্যত্তয় ঘটবে। অতীতের লোভ-লালসাকে কেন্দ্র করে ঐ একই ব্যক্তির একই সিস্টেম দিয়ে আবার ২৫টির
সিন্ডকেট করার পায়তারা করছে।
৪। অন্য ১৩টি দেশের সাথে বাংলাদেশের কর্মী প্রেরণে বৈষম্যতাঃ
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ ব্যতীত অন্যান্য ১৩টি সোর্স কান্ট্রি থেকে সিন্ডিকেটবিহীন স্বাভাবিক নিয়মে কর্মী নিয়োগের বিপরীতে
শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ অমর্যাদাকর। অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা তার
পছন্দসই রিক্রটিং এজঙ্গীকে বেছে নেওয়ায় কর্মী প্রেরনের অভিবাসন ব্যয় অনেক কম হয়। অন্যান্য ১৩টি সোর্স কান্ট্রির ন্যায় আমরা
মনে করি বাংলাদেশ থেকে কোন ক্রাইটেরিয়ায়, কতটি এজেন্সী সিলেকশন হবে সেটা একান্তই বাংলাদেশ সরকারের বিবেচ্য বিষয়।
সুতরাং বৈধ ও যোগ্য এজেন্সী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের ২৫ এজঙ্গী সিলেকশনের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ যৌক্তিক
ও গ্রহনযোগ্য নয়।
৫ । খোদ মালয়েশিয়াতেই ৫০০ এর অধিক রিক্রটিং এজেন্সী অনুমদিতঃ
উল্লেখ্য মালয়েশিয়ায় রিক্রুটিং এজন্সী (সি লাইসেন্সে প্রাপ্ত) সিলেকশনের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ২৫টির পরিবর্তে খোদ নিজ দেশেই সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে মালয়েশিয়া সরকার ৫০০ এর অধিক রিক্রটিং এজেন্সীকে অনুমোদন দেয়। অতএব আমাদের দেশের
স্বার্থে বৈধ ও যোগ্য সকল রিক্রটিং এজেন্সীকে কাজ করার সুযোগ প্রদান আবশ্যিক।
প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে উভয় দেশেই সমভাবে ১৪১ রেশিওতে এজেন্সী সমূহকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। যদি মালায়শিয়ার
৫১৩ টি রিক্রুটিং এজেন্সী (সি লাইসেন্সে প্রাপ্ত) বাংলাদেশের মাত্র ২৫ টি এজেন্সীর সাথে কাজ করে তবে ১ঃ২১ এজেন্সীর কাজের
আনুপাতিক হার অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ অনুযায়ী আমাদের দেশের স্বার্থে বৈধ ও যোগ্য সকল রিক্রটিং এজেন্সীকে কাজ করার সুযোগ প্রদান আবশ্যিক।
৬। মাত্র ১.৬ % (২৫টি) রিক্রুটিং এজেন্সী র মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ কর্মীর প্রেরন অসম্ভব :
যেখানে অনুমিত প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে সেখানে এই বিপুল পরিমান কর্মী প্রেরণের জন্য যোগ্য সকল রিক্রুটিং
এজেন্সীর অংশগ্রহন না করিয়ে মাত্র ২৫ টি অযোগ্য রিজুটিং এজেন্সীর সিন্ডিকেট কি ভাবে যুক্তিযুক্ত হয়? বাংলাদেশে প্রায় ১৫০০
রিক্রুটিং লাইসেন্স বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণ করে আসছে সেক্ষেত্রে কেন ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সীকে নিয়ে সিন্ডিকেট করতে
হবে? যেটা কিনা সামগ্রিক রিক্রুটিং লাইসেন্সের মাত্র ১.৬ % । কেন ৯৮ ভাগের বেশী রিক্রুটিং এজেন্সীকে বঞ্ছিত করা হবে। এবং এক্ষত্রে সরাসরি সিংহ ভাগ কর্মী প্রেরনের সুবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হবে বংলাদেশ। সেদিক বিবেচনায় মূলত ১% এর কম
সক্ষমাতার রিক্রুটিং এজেন্সী নিয়ে বিপুল পরিমাণ কর্মী প্রেরণের প্রচেষ্টা নিতান্তই অযৌক্তিক ও অসম্ভব ।
৭। সিন্ডিকেটের ৮০% এজেন্সি অদক্ষ ও অনভিজ্ঞঃ
যেই ২৫ টিকে নিয়ে সিন্ডিকেট করার প্রচেষ্টা চলছে তাদের ব্যবসায়িক রেকর্ডের দিকে তাকালে দেখা যাবে মাত্র ৫-৬টি এজেন্সি
মালয়েশিয়াতে সক্ষমতার সাথে কর্মী পেরনে সক্ষম । সেক্ষেত্রে ৮০% অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ এজেন্সি দিয়ে ১৫-২০ লক্ষ কর্মী প্রেরন
একটি অবাস্তব এবং কাল্পনিক। মাত্র ২৫টি এজেন্সি দিয়ে দেশ থেকে কর্মী প্রেরণের পুরো পারফরমেন্স কখনোই পাওয়া যাবেনা। সূত্র
মতে সরকারের অনুমোদিত ১৫০০ এজেন্সির মাঝে প্রায় ৪০০-৫০০ এজেন্সির মালয়েশিয়াতে কর্মী প্রেরনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদি
পরোক্ষভাবে ৫০০ এজেন্সি সাব-এজেন্সি হয়ে ২৫টির উপর নির্ভরশীল থাকে তবে সেখানে সরাসরি গেটওয়ে থাকবেনা ফলে অসুস্থ
প্রতিযোগিতা হবে, অনৈতিক লেনদেন হবে, দূর্নীতি ও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তদোপরি, একই ক্যাটাগরির লাইসেন্স ও
লক্ষাধিক টাকা সরকারি জামানত দিয়ে একটি এজেন্সি আরেকটি এজেন্সির সাব-এজেন্ট হয়ে কাজ করা অমর্যাদাকর ।
৮। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শ্রমবাজারে অস্থিরতাঃ
পূর্বের ন্যায় এবারও প্রস্তাবিত ২৫টি সিন্ডিকেট বাস্তবায়িত হলে দেশের সুনাম নষ্ট, শ্রমবাজারে অস্থিরতা ও ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে
কর্মী প্রেরনে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা থাকবে না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে কর্মী প্রেরন করায় বিশ্বে বাংলাদেশ সরকার ও উক্ত সেক্টরের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
৯। আইনের অবমাননাঃ
বাংলাদেশের কম্পিটিশন এক্ট অনুযায়ী সকল এজেন্সির অধিকার সমান সুতরাং সিন্ডিকেট বাস্তবায়িত হলে আইনের অবমাননা হবে।
১০। বাংলাদেশের সরকারের কাছেও বিকল্প সিস্টেম দেয়ার সক্ষমতা রয়েছেঃ
৯। আইনের অবমাননাঃ
বাংলাদেশের কম্পিটিশন এক্ট অনুযায়ী সকল এজেন্সির অধিকার সমান সুতরাং সিন্ডিকেট বাস্তবায়িত হলে আইনের অবমাননা হবে।
১০। বাংলাদেশের সরকারের কাছেও বিকল্প সিস্টেম দেয়ার সক্ষমতা রয়েছেঃ
বাংলাদেশের সরকারের কাছেও বিকল্প সিস্টেম দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। সর্বোপরি অন্তত পক্ষে আলোচনার ভিত্তিতে দুই দেশ থেকে
সকলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে ২ টি সিস্টেম চালু করা যেতে পারে যেখানে মালায়শিয়ান এমপ্লয়াররা যে সিস্টেম ভাল মনে করবে সেটি সিলেক্ট করবে ও স্বচ্ছ ভাবে কাজ হবে। এতেই প্রতিযোগিতা আইন ২০১২- এর সুষ্ঠু প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন হবে।
১১। লাইসেন্স নবায়নে জটিলতা ও বিশৃংখলাঃ
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের নিয়ম অনুযায়ি প্রত্যেক লাইসেন্স নবায়ন এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমান কর্মী পাঠানোর
বাধ্যবাদকতা আছে, সেক্ষেত্রে সিন্ডিকেট হলে বাকি প্রায় ৯৯% এজেন্সির লাইসেন্স নবায়নে জটিলতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে।
১২। উপজেলা প্রতি ১০০০ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থানঃ
সিন্ডিকেটের কারনে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় ১০০০ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা।
১৩। সিন্ডিকেট হলে সব সেক্টরে কর্মী প্রেরণ সম্ভব হবেনাঃ
এজেন্সীর সিন্ডিকেট হলে এবারও অতীতের মতো অতিরিক্ত অভিবাসনের কারণে মালয়েশিয়ার RBA (Responsible
Business Alliance) অর্থাৎ যারা বিনা পয়সায়, সার্ভিস চার্জ দিয়ে কর্মী নেয় সে সকল কোম্পানি যেমন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স,ক্ষতিগ্রস্থ হবে।গার্মেন্টস, হ্যন্ড গ্লাভস, প্লান্টেশন, সিকিউরিটি এর বড় বড় কোম্পানি গুলো বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে পারবেনা ফলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
১৪। হাইকোর্টের নির্দেশনাঃ
মালয়েশিয়া অভিবাসন সেক্টরে কোন প্রকার সিন্ডিকেট করা যাবেনা এই মর্মে মহামান্য আপিল বিভাগ রায়ও প্রদান করেছে।
১৫। বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) এর সিন্ডিকেট নিয়ে উদ্বেগ ও বিবৃতিঃ
অভিবাসন নিয়ে কর্মরত ২০টি সংগঠনের প্লাটফরম বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) বাংলাদেশের অন্যতম
শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিন্ডিকেট প্রক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ২৭ এপ্রিল ২০২২ এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে
তারা বলেন, সিন্ডিকেট সহ যেসব কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল ভবিষ্যতে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এর বদলে উম্মুক্ত ও স্বচ্ছ ভাবে যেন কর্মী পাঠানো হয় যাতে অভিবাসী শ্রমিকরা কোনভাবেই ক্ষতিগ্ৰন্ত না হয়।
১৬। অন্যকোন দেশে সিণ্ডিকেট নেইঃ
বর্তমানে কোনো প্রকার সিন্ডিকেট ছাড়াই বাংলাদেশের সকল রিজুটিং এজেন্সী সরকার নির্ধারিত খরচে সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে প্রতি মাসে প্রায় এক লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান করছে। সুতরাং মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোর জন্য কোনো প্রকার সিন্ডিকেট এর প্রয়োজন নেই।
১৭। TIP র্যাংকিং-এ বাংলাদেশের সূচকে নিম্নেগামী হওয়ার আশংকাঃ
আমেরিকার The Trafficking in Person (TIP) নির্ধারিত সূচক অনুযায়ী মালয়েশিয়া সর্ব নিম্ন ধাপ টায়ার-৩ তে (Tier-3)
অবস্থান করছে। যাহা র্যাংকিং এর সর্বনিম্ন অবস্থান। বর্তমানে বাংলাদেশের সূচকের অবস্থান টায়ার-২ তে (Tier-2) দ্বিতীয় স্থানে। এমতাবস্থায়, ২৫ টি লাইসেন্সের মাধ্যমে পূর্বের ন্যার (২০১৬-২০১৮)
কর্মী প্রেরনের ব্যবস্থা গ্রহন করিলে TIP র্যাংকিং এর
বাংলাদেশের সূচকে নিম্নেগামী হওয়ার আশংকা রয়েছে।
১৮ । সিন্ডিকেট অনুমোদন না করার জন্য Malaysia Recruiting Agency Association এর চিঠিঃ
Malaysia Recruiting Agency Association (MRA) আমাদের মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়কে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সীর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে বাংলাদেশী কর্মী প্রেরন না করার জন্য জোর অনুরোধ করে পত্র প্রদান করেন। তারা আরো বলেন এটি একটি অনৈতিক প্রস্তাব। যা বিদেশগামী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় অতিমাত্রায় বৃদ্ধি করবে। মালয়েশিয়াতে ৫০০ এর অধিক রিক্রুটিং এজেন্সী (MRA) রয়েছে এবং উন্মুক্তবাজারে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে সবাই কাজ করছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন নীতির প্রয়োগ অযৌক্তিক ও অনৈতিক।
১৯ ।অভিবাসন ব্যয় পুর্বের ন্যায় বৃদ্ধিঃ
সিন্ডিকেট হলে অভিবাসন ব্যয় কয়েক গুন বৃদ্ধি পাবে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী খরচ নিয়ন্ত্রন করা যাবেনা।
বর্তমানে আমেরিকা বা ইউকে Modern Slavery, ILO, IOM সহ অন্যান্য সংস্থা মালয়েশিয়ার নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কঠোর
ভাবে পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষন করছেন। বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী সকল এজেন্সির অধিকার সমান সুতরাং এই সংক্রান্ত মামলা পূর্বেও হয়েছিল, তাই ভবিষ্যতেও হতে পারে ফলে শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এক্ষেত্রে সকল ব্যবসায়ীদের সমতার ভিত্তিতে সরকারের সুনিদৃষ্ট নজরদারী এবং পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রয়োজনে আমরা দীর্ঘদিনের
ব্যবসায়ী হিসাবে সরকারের সাথে সহযোগীতা করতে প্রস্তুত আছে বলেন জানান। কিন্তু কোন প্রকার সিন্ডিকেট আমাদের কারো কাছে কাম্য হতে পারে না। সুতরাং এক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুন্দর সু-পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যয় এবং
নৈতিক অভিবাসন নীতিই প্রণয়নের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসনের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় বলে আমরা বিশ্বাস করেন।