মাহমুদুল হাসান সুজন:
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কোন প্রকার সিন্ডিকেটকে অনুমোদন না দিয়ে বাংলাদেশের কম্পিটিশন আইন অনুযায়ী এবং মালয়েশিয়ার অন্যান্য শ্রমিক প্রেরণকারী ১৩টি সোর্স কান্ট্রির ন্যায় বাংলাদেশের সকল প্রকার বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রম বাজার উন্মুক্ত করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বায়রা সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোটের আয়োজনে রাজধানীর একটি হোটেলে ২১শে মে শনিবার সকালে এ গোলটেবিল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বায়রার সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী হায়দার চৌধুরী । প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য ও ককার্স এর সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই এর সভাপতি জনাব মোঃ জসিম উদ্দিন, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি জনাব এ কে আজাদ, বায়রার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ নুর আলী, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বায়রার সাবেক মহাসচিব জনাব রিয়াজুল ইসলাম, বায়রার সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন,২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০১ জন এবং ২০০৮ সালে ৩১ হাজার ৭৬২ জন কর্মী মালায়েশিয়া গিয়েছে। কিন্তু এরপরই কলিং ভিসার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। সে সময় ৮৪ হাজার টাকা কর্মী যাওয়ার কথা থাকলেও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা নেওয়া হয় একজনার কাছ থেকে। তারপরও মালাইশিয়ার রাস্তাঘাটে ফ্লাইওভারের নিচে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি কাজ না পেয়ে সংকটে পড়েছে। এক বেলা খাবারের জন্য অনেকেই পথে নামেনি। এরপর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ফের কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালায়শিয়া।অবৈধ হয়ে পড়ে কয়েক লাখ কর্মী। সংকটের মুখে পড়ে বৈধ রিক্রুটিং ব্যবসায়ীরা।
গত ২০১৬ সালে ১০ (দশ) টি বাংলাদেশী রিক্রুটিং লাইসেন্স নিয়ে গঠিত
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি প্রেরন শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় সহ
নানা রকম অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযােগে তৎকালীন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাতির মুহাম্মদ এর দ্বায়িত্বভার
গ্রহন করার পরেই ২০১৬-২০১৮ চুক্তি অনুযায়ী ০৫ (পাঁচ) বছরে পনেরাে লক্ষ কর্মী মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুই লক্ষ পঁচাত্তর হাজার কর্মী গমনের পর শ্রমবাজারটি পূর্ববর্তী মালয়েশিয়া সরকারের অনুমােদন দেওয়া সিস্টেমটি স্বচছ না থাকায় বাংলাদেশ হইতে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। সেই সময় এই সিন্ডিকেটের দ্বারা নিয়ােগকৃত প্রায় লক্ষাধিক কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ইহাতে বিদেশগামী কর্মী এবং দেশের আর্থিক ক্ষতি সাধন হয়।
আমরা মনেকরি, অভিবাসন প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়া উচিৎ। দুই দেশের মধ্যে আলােচনা সাপেক্ষে কর্মীর স্বার্থরক্ষা করে এমন একটি স্বচ্ছ সিস্টেমের মাধ্যমে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সীগণকে সম্পৃক্ত করে পুনরায় মালয়েশিয়া শ্রমবাজারটি উন্মােক্ত করা হওক। সিন্ডিকেট প্রথা পরিহার করে অতিসত্তর মালয়েশিয়া শ্রমবাজার উন্মোক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা, মনিনীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জনাব ইমরান আহমেদ এম.পি., মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব এ. কে, আব্দুল মােমেন এম.পি., মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
কামাল এম.পি. মহােদয়কে বায়রার সকল সম্মানিত সদস্য ও বিদেশগামী কর্মী ভাইদের পক্ষ হইতে জোরদাবি জানাচ্ছি।
আরো বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন গত ২০১৬-২০১৮ সময়ে ১০ (দশ) লাইসেল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ। করার কারনে কমীরাদের অভিবাসন ব্যয়, মেডিকেল সহ অন্যান্য বিষয়ে যে ভােগান্তির শিকার হয়েছিলেন তাহা আপনাদের অজানা নয়। আপনাদের বিভিন্ন পত্রিকা টিভি চ্যানেলে ১০ (দশ) সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রেরিত কর্মীদের ভােগান্তির কথা বারংবার প্রচার করিয়াছেন। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩৫,০০০/- টাকায় কর্মী প্রেরনের করার কথা থাকলেও পরিবর্তে ৩,৫০,০০০/- টাকার অধিক কর্মীদের নিকট হইতে গ্রহন করিয়াছেন। যাহার ফলশ্রুতিতে আমেরিচ, ইউরােপ সহ মালয়েশিয়ার ঐ সমস্ত ফ্যাক্টরি হইতে তাহাদের প্রস্তুত কৃত প্রােডাক্ট ক্রয়ের অর্ডার বাতিল করিয়াছেন এবং তাদের নিয়ােগকৃত সকল কর্মীদেরকে ১৫-২০ হাজার রিঙ্গিত করে ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করিয়াছে যাহা মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন প্রত্রিকায় প্রকাশিত
হইয়াছে। উক্ত দেশগুলাে পুনরায় মালয়েশিয়ার কোম্পানি হইতে তাদের তৈরিকৃত প্রােডাক্টগুলাে গ্রহন করবে এবং উক্ত কোম্পানি গুলাে ভবিষতে বিদেশি কর্মীগ্রহনে সময় কর্মীর অভিবাসন ব্যয় নিয়ােগকর্তা বহন করিবে বলিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হইয়াছে, উল্লেখ্য কোম্পানিগুলাে Felda Head Glove Factory সহ বিভিন্ন আরাে অন্যান্য কোম্পানি।
আরো উল্লেখ্য আমেরিকা The Trafficking in persons (ZIP) নির্ধারিত সূচক অনুযায়ী মালয়েশিয়ার অবস্থান তৃতীয়। যাহা র্যাংকিং এর সণ, অবস্থান। বর্তমানে বাংলাদেশ অবস্থান সূচকের দ্বিতীয় স্থানে ।
গত ১৪ই অনুমানী, ২০২২ নবেল গণালয়ের সাননীয় মন্ত্রী কর্তৃক বিত, ১৫ টি লাইসেন্সের মাধ্যমে পূর্বের ন্যায় (২০১৬-২০১৮ শী প্রেরনের ব্যবস্থা গ্রহন করিলে (TIP) Rankingএর বাংলাদেশের সূচকে নিম্নেগামী হওয়ার আশংকা রহিয়াছে। সেই সাথে পূর্বের ন্যায় মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের উচ্চ অভিবাসন ব্যয় ও অন্যান্য অসুবিধার সম্মুখীন হইবে এবং নিয়ােগকর্তাগণ এবং কর্মীগন তাদের পছন্দ মত রিক্রুটিং এজেন্সী মাধ্যমে যাওয়া হইতে বঞ্চিত হইবেন।
এইখানে আবারাে উল্লেখ্য, বর্তমানে আমেরিকা বা ইউকে Modern Slavery, ILO ও IOM সহ অন্যান্য সংস্থা মালয়েশিয়ার নিয়ােগ প্রক্রিয়াকে কঠোর ভাবে পর্যালােচনা ও পর্যবেক্ষন করছেন।
তারা আরো বলেন,
আপনারা সবাই এক কথায় স্বীকার করবেন যে মুক্ত বাজার অর্থনিতিতে স্বচ্ছ অবকাঠামাে মাধ্যমে যে কোন শ্রম বাজার উন্মােক্ত হইলে বিদেশগামী কর্মী, নিয়ােগকর্তা, রিক্রুটিং এজেন্সীগণ, প্রেরনকারী ও নিয়ােগকারী দেশ সবাই লাভবান হইবে ।আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং মাননীয় প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী জনাব ইমরান
আহমেদ এম.পি., স্বচ্ছ অবকাঠামাে এবং মালয়েশিয়ায় অন্য ১৩টি Source Country হইতে যে প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়ােগ করা হয় বাংলাদেশ হইতে একই প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়ােগের সিদ্দান্ত নিয়াছেণ। আমরা রিক্রুটিং এজেন্সীগণ ও বিদেশগামী কর্মীদের পক্ষ হইতে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কর্মী এবং নিয়ােগ কর্তা স্বার্থের কথা চিন্তা করে তারা তাদের বর্তমান অবস্থানে সুদৃঢ় থাকবেন বলে আমরা প্রতাসা করি ।
রিক্রুটিং এজেন্সীর মালিকগণ অঙ্গীকার করিতেছি যে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কতৃক নির্ধারিত অভিবাসন
ব্যয়ে কর্মী প্রেরন করিবাে। এই ব্যাপারে কোন ব্যতয় বা অনিয়ম হইলে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সীর বিরুদ্ধে
যেকোন ব্যবস্থা যেকোন ব্যবস্থা যেকোন ব্যবস্থা গ্রহন করিতে পারিবে। আমরা আরো অঙ্গীকারবদ্ধ যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘােষিত প্রত্যেক
উপজেলা হইতে নূন্যপক্ষে ১০০০ কর্মী প্রেরন করিতে বাধিত থাকিবাে।
সকলে মিলে এই অবৈধ ও অনৈতিক তথাকথিত ২৫ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরােধ গড়ে তুলি। এই তথাকথিত সিন্ডিকেটের দৌরাত্তের কারনে গত ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২১ সমঝােতা স্মাক্ষর হওয়ার পরেও গত পাঁচ মাস যাবত মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরন করা যায়নি। তথাকথিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরন করার লক্ষ্যে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে অন্য ১৩ টি Source Country মত কর্মী প্রেরনে বাধা প্রদান করেছেন
এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।