রিপোর্ট: রফিকুল ইসলাম
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ আইডিয়াল কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান সহ দুর্নীতিগ্রস্থ কতিপয় সদস্যদের দ্রুত পদত্যাগ দাবী এবং বর্তমান গভর্নিং বডি বিলুপ্ত করে এ্যাডহক কমিটি তৈরি করে নতুন গভর্নিং বডি গঠন না করা পর্যন্ত কলেজের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বর্জনের কর্মসূচি ঘোষনা করেছেন শিক্ষকবৃন্দ।
আজ সকালে কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পাদদেশে বেলা ১১ টায় সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের আয়োজনে কলেজের গভর্নিং বডির ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মনিরুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, কলেজ গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান দীর্ঘ প্রায় ১৪ (চৌদ্দ) বছর যাবত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় এবং গভর্নিং বড়ির কতিপয় আসাধু সদস্যদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। সুপ্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডির সভাপতির প্রত্যক্ষ মদদে অনিয়মের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ও জালিয়াতির মাধ্যমে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটপাট ও আত্মসাত করার অভিযোগে উক্ত অধ্যক্ষ জনাব জসিম উদ্দীন আহম্মেদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌপিক আজিজ চৌধুরি, বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী কিছুদিন পূর্বে সাময়িক বরখাস্থ হন। তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য বিধি মোতাবেক তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যদের পরামর্শ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দীর্ঘ প্রায় ০৫ (পাঁচ) মাস ধরে আইনগত জটিলতার মধ্যে আটকে আছে। সাময়িক বরখাস্থকৃতদের পুনর্বহাল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা কলেজের সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কমচারীরা মেনে নেননি। গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যদের যোগসাজশে সাময়িক বরখাস্থকৃতদের এ ধরণের বিভিন্ন এজেন্ডা গভর্নিং বডির সভায় নিয়মিত বাস্তবায়িত হয় ।
উপাধ্যক্ষ নিজেও বিভিন্ন কমিটির আহবায়ক থেকে দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। ২০২২ সালে ভর্তি কমিটিতে ১৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার কোন হিসাবই পাওয়া যায়নি। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কমিটিতে এভাবে নগদ টাকা উত্তোলন করে খরচের সঠিক হিসাব ছাড়াই গভর্নিং বড়ির অর্থ কমিটিতে ও নিয়মিত সভায় বিনা বাধায় অনুমোদন করা হয়েছে। এধরণের দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষভাবে গভর্নিং বডির সদস্যরা জড়িত থাকেন।
এছাড়াও গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যদের সহযোগিতায় অনিয়ম করে অপ্রয়োজনীয় বিপুল সংখ্যক শিক্ষক- কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য চালানো হয়েছে। তাদের তত্ত্বাবধানে কিছু দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের সহায়তায় বিনা রশিদে শিক্ষার্থীদের নিকট বিভিন্ন সার্ভিসের টাকা গ্রহণ করে আবার কখনও ভুয়া কাগজপত্র, ভাউচার তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। বিভিন্ন ক্রয়, সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজ দরপত্র বিহীন, বিল-ভাউচার বিহীন বা জাল দরপত্র ও জাল বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে সম্পন্ন করা হয়। এধরণের দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষভাবে গভর্নিং বডির সদস্যরা জড়িত থাকেন।
শিক্ষক-কর্মচারীরা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের দ্বারা তাদের অপমানিত ও হেনস্থা হতে হয় । শিক্ষক কর্মচারীদেরকে ভয়ভীতির মধ্যে রাখার জন্য শিক্ষকদের অবৈধভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয় ।
লিখিত বক্তব্যের শেষে, আইডিয়াল কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করা হয়। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান সহ দুর্নীতিগ্রস্থ কতিপয় সদস্যদের দ্রুত পদত্যাগ দাবী করেন। তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বর্তমান গভর্নিং বডি বিলুপ্ত করে এ্যাডহক কমিটি তৈরি করে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের ব্যবস্থা নিতেও দাবী জানান। তারা তাদের দাবী মানা না পর্যন্ত কলেজের সকল প্রকার কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন।