মাহমুদুল হাসান সুজন:
মৎস্য অধিদপ্তরাধীন “ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প (২য় পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্পের রাজস্ব বাজেটের আওতায় বেতনভূক্ত
সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ৫১২ (পাঁচশত বার) জন জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য গত ২৫শে মে থেকে লাগাতার অনশন কর্মসূচি পালন করছেন ইউনিয়ন প্রকল্পের কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা ।
শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন প্রকল্পের কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান। আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সাঈদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ,কোষাধক্ষ্য মোঃ সুমণ হসেন, সহ-কোষাধ্যক্ষ মন্টু বৈদ্যসহ সারাদেশ থেকে আসা সংগঠনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
অনশন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন,মৎস্য অধিদপ্তরাধীন “ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ (২য় পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ রাজস্ব অর্থায়নের একটি
বৃহৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদপ্তরে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ৫০০ ক্ষেত্র সহকারী ও অন্যান্য পদে ১২ জনসহ মোট ৫১২ জন জনবলকে সরকারি
সকল বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ১৬তম গ্রেডে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করেন এবং এই জনবল রাজস্ব কর্মচারীদের মত সকল সরকারী সুযোগ সুবিধা ভোগ করে
আসছে। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিগত ০১/০৪/২০১৫ খ্রি. এর মৎস্য ও চিংড়ি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ৩য় সভায় মৎস্য অধিদপ্তরের
রাজস্বখাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্মতি প্রদানকৃত ৬০০ টি ক্ষেত্র সহকারী পদ সৃজনের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু উক্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী
প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের পরেও মৎস্য অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় তা আলোর মুখ দেখছে না! বক্তারা
আরও বলেন যে, নিয়োগপ্রাপ্তির পর ৫০০ জন ক্ষেত্রসহকারী কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য করে তোলা হয়। বিগত ০৭ (সাত) বছর যাবৎ উক্তপ্রকল্পের কারিগরি জ্ঞানসম্পূর্ণ দক্ষ এই জনবল মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক চাষিদের আঙ্গিনায় আধুনিক প্রযুক্তি ডিজিটাল ওয়াটার টেস্টিং কাঁটবক্স-এর মাধ্যমে মাটি
ও পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুনাগুন পরিমাপের মাধ্যমে পরামর্শ ও সেবা দিয়ে আসছেন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
এছাড়া প্রকল্পের জনবল দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ রক্ষা ও মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ও অভিযান
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দক্ষতার সহিত বাস্তবায়ন করে আসছেন। ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৮৩%। ফলে ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগলিক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে আইটি সেক্টরে দক্ষ জনবলের অভাব থাকায় উক্ত প্রকল্পের নিয়োগকৃত জনবল আইটি সেক্টরে দক্ষ হওয়ায় দাপ্তরিক সকল কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদন করে আসছে। ফলে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়েছেন সেটা মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব
হচ্ছে। এছাড়া মৎস্যচাষিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের আধুনিক মাছচাষ ব্যবস্থাপনা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন, মৎসজীবিদের মাঝে ভিজিএফ বিতরণ,মৎস্য খাদ্যমান ও লাইসেন্স কার্যক্রমে সহযোগিতা এবং জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসহ মৎস্য অধিদপ্তরের রাজস্ব ও অন্যান্য প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে আসছে। এছাড়াও করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারিবারের কথা চিন্তা না করে দেশের মাছের উৎপাদন ও সরবরাহ সু-নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে সেবা প্রদান করে আসছেন।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মৎস্য অধিদপ্তরের এ যাবতকালের সবচেয়ে সফল এই প্রকল্পটি দীর্ঘ ০৭(সাত) বছর পর আগামী ৩০ জুন, ২০২২ খ্রি. সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের দক্ষ জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরের জন্য সহায়ক সকল নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও, অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের যথাযথ
জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবে এই দক্ষ জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তর হচ্ছে না।
এমতাবস্থায় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ এই জনবলের অধিকাংশের বয়স ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পাওয়ার সুযোগ নেই। স্বল্প বেতনের চাকুরি করে বৃদ্ধ পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভরণ-পোষণ করে আসছে। এই জনবল চাকুরিচ্যুত হলে মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম, দাপ্তরিক কার্যক্রম, মাছের উৎপাদন ও সরবরাহ স্থবির হয়ে পড়বে, যা সরকারের কাঙ্খিত উন্নয়ন নীতি ও উদ্দেশ্য এর পরিপন্থি। অন্যদিকে এই
জনবল পারিবারিক, সামাজিক, নৈতিক তথা সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন হয়ে পড়বে।
অতএব, উপরোক্ত বিষয় বিবেচনা করে “ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ (২য় পর্যায়)” শীর্ষক প্রকল্পের রাজস্ব বাজেটের আওতায় বেতনভূক্ত
সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ক্ষেত্র সহকারী ৫০০ (পাঁচশত) জন ও অন্যান্য পরে ১২ (বার) জনসহ সর্বমোট ৫১২ (পাঁচশত বার) জন রাজস্বখাতে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি উক্ত জনবল কোনভাবেই যেন জুন, ২০২২ খ্রি. এর পর বেকার না হয়ে পড়ে, সে জন্য “মৎস্য অধিদপ্তর” এবং “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়” এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য “মমতাময়ী মা, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী “শেখ হাসিনা”
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের সু-দৃষ্টিসহ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।