মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কোন প্রকার সিন্ডিকেটকে অনুমোদন না দিয়ে অন্যান্য ১৩ টি সোর্স কান্ট্রির ন্যায় সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের দাবি এবং ২৫ সিন্ডিকেটের অপচেষ্টার প্রতিবাদে (আজ ২৭এপ্রিল বুধবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বায়রা সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোট।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি মোঃ আবুল বাশার, সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সাবেক মহাসচিব শামিম আহমেদ চৌধুরি নোমান, বায়রার সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান সহ বায়রা সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন,
দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকা মালয়েশিয়া শ্রমবাজারটি পুনরায় চালু করার নিমিত্তে বিগত ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ নতুন করে দুই দেশের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু বিগত ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২ মালয়েশিয়ান মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান এমওইউ এর বিষয়বস্তু সমূহ পাশকাটিয়ে বাংলাদেশের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী আমদানির লক্ষ্যে মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীকে লিখিত প্রস্তাব প্রেরণ করেন। যতদূর জানা যায় উভয় দেশের একটি স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মালয়েশিয়ান মন্ত্রী এহেন গর্হিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
তবে, মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রীর চিঠির জবাবে মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী কালবিলম্ব না করে ঠিক তার পরদিন অর্থাৎ ১৮ই জানুয়ারী চিঠির জবাব পাঠান . চিঠিতে এম ও ইউ অনুসরণ করা অথবা বাংলাদেশের কম্পিটিশন এক্ট অনুযায়ী সকল রিক্রুটিং এজেন্সির সমধিকার এর কথা উল্লেখ করে জে ডব্লিউ সি মিটিং এর মাধ্যমে রিক্রুটমেন্ট প্রসেস চূড়ান্ত করার এবং আই এল ও সনদ অনুযায়ী ট্রান্সফারেন্ট, ফেয়ার এবং সেফ মাইগ্রেশনের কথা বলেন- সেই জন্য মন্ত্রী মহােদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এরপর বাংলাদেশ দূতাবাসও মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাই পদ্ধতি অনলাইন ও স্বয়ংক্রিয় করা এবং দুই দেশের অনলাইন পদ্ধতি যুক্ত করা বিষয়ে জে ডব্লিউ সি মিটিং এর প্রস্তাব দেন।
সুতরাং এতে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় মাননীয় মন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে কোনাে প্রকার গাফেলতি নেই,
সুতরাং মাননীয় মন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী জে ডব্লিউ সি মিটিং করে যাবতীয় সিস্টেম ঠিক না করা অথবা অন্যান্য শ্রমিক প্রেরণকারী দেশের ন্যায় মর্যাদা না দেয়া সত্বেও বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণ অমর্যাদাকর বলে মনে করেন।
মালয়েশিয়া শ্রমবাজার সম্পর্কে মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বারংবার বলেছেন , কম খরচে বাজার সকলের জন্য উম্মুক্ত করবেন, যাত্রীদের শুধু একবার মেডিকেল করার ব্যাবস্থা করবেন , এম ও ইউ অনুযায়ী জে ডব্লিউ সি মিটিং
করে সিস্টেম ঠিক করবেন , আই এল ও কনভেনশন অনুসরণ করবেন , স্বল্প খরচে যাওয়ার জন্য ডাটা ব্যাঙ্ক থেকে কর্মী নেয়ার ব্যবস্থা করবেন, অন্য ১৩ টি দেশের ন্যায় কর্ম যাবে এবং বাংলাদেশের অনলাইন সিস্টেম চালুর ব্যবস্থা করবেন . আমরা মাননীয় মন্ত্রীর উপরােক্ত সকল বক্তব্যের সাথে একমত এবং আমাদের প্রত্যাশা তিনি তার বক্তব্যে অবিচল থাকবেন ।
কিন্তু তবুও সম্ভাব্য ২৫ সিন্ডিকেটের সদস্যরা অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটানাের আপ্রাণ চেষ্টা অব্যহত রেখেছে। তারা
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার অপপ্রচার চালিয়ে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করছে, ইতিমধ্যে তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের
অনুমােদন ব্যতিরেখে মেডিক্যাল সেন্টারের বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে।
বক্তারা আরো বলেন ১০ সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে চালু হওয়া ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কারণে মাত্র দেড় বছরের মাথায় মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী
নেয়া বন্ধ করে দেয়। বাতিল করে এস পি পি এ নামক ১০ এজেন্সির অটো ডিস্ট্রিবিউশন পদ্ধতি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শুরু হওয়া শ্রমবাজার এবং অনিয়মের ফলে বাজারটি বন্ধ হয়ে যাওয়া, উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই দেশের নিরীহ কর্মীরা, দেশ বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের কারণে বিনষ্ট হয় দেশের ভাবমূর্তি। সেইসাথে
এই দেশের গরীব নিরীহ কর্মহীন মানুষ বঞ্চিত হয় বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে।
বায়রা সিন্ডিকেট বিরোধী মহাজোট কমিটির সদস্যরা আরো বলেন , স্বর্থান্বেষী মহলের কর্তৃক সিন্ডিকেট বাস্তবায়ন হয় দেশের রিক্রুটিং ব্যবসায় যেসকল ক্ষতি হবে তা হল,
- পূর্বের ন্যায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং স্বার্থানেষী মহলের কিছু সংখ্যক ব্যক্তির দেশ
বিরােধী তৎপরতা চরিতার্থ হবে। - মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘােষণা অনুযায়ী প্রতি উপজেলায় ১০০০ কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান বাস্তবায়ন ব্যহত হবে ।
- অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দেশি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে, যাহা ইতিমধ্যেই
শুরু হয়েছে। ফলে সরকার ও দেশের সুনাম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। - সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ করলে কর্মী প্রেরণের গতি যেমন কমে যাবে, তেমনি সক্ষমতা থাকা
সত্ত্বেও শত শত রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের ব্যবসার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। - শ্রম বাজার দীর্ঘায়িত না হয়ে পূর্বের ন্যায় যেকোনাে সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- জনশক্তি রপ্তানি সেক্টরে অনিয়ম, অরাজকতা, পারস্পরিক রেষারেষি বৃদ্ধি পাবে।
- মালয়েশিয়া আরও ২৩ টি সাের্স কান্ট্রি থেকে সিন্ডিকেটবিহীন স্বাভাবিক নিয়মে কর্মী আমদানির বিপরীতে শুধুমাত্র
বাংলাদেশ থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক আমদানি করলে, সেটি হবে স্বাধীন দেশের জন্য অমর্যাদাকর। - মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় ও শ্রমিক শােষণের কারণে, আন্তর্জাতিকভাবে সে দেশের কিছু
কিছু কোম্পানির প্রােডাক্ট কানাডা আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে। যাহা পরবর্তীতে
বাংলাদেশের শ্রম বাজারকে প্রভাবিত করবে। বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি সম্পৃক্ত করে কর্তৃপক্ষের নজরদারী মাধ্যমে বাজারটি উন্মুক্তের ব্যবস্থা করলে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে বলে মনে করেন তারা।
বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি এবং জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কোন প্রকার সিন্ডিকেট প্রথা কে প্রশ্রয় না দিয়ে অন্য ১৩ টি সোর্স কান্ট্রির সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালয়েশিয়ান শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন এবং তারা আরো বলেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যাকে সমাধান করতে পারবে বলে মনে করেন।