রিপোর্ট: রফিকুল ইসলাম
মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থন পরবর্তী অগ্রগতি ও ভবিষ্যতে পদক্ষেপ বিষয়ে ভিপসের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সদস্য এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের প্রতিনিধিদের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার বেলা ২ ঘটিকায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অডিটোরিয়াম কক্ষে উক্ত সভার আয়োজনে ছিল ভিজুয়ালী ইম্পেয়ার্ড পিপল্স সোসাইটি(ভিপস), সহযোগিতায় ছিল- মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন(এমজেএফ), এবং সাইটসেভার্স বাংলাদেশ।
সভার একটি পর্বে ভিপসের সম্মানিত সদস্য এবং বার্ডোর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ সাইদুল হককে ২০২৩ সালে সমাজসেবা খাতে অবদানের জন্য একুশে পদক প্রাপ্তির জন্য সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সভায় ভিপসের সদস্য এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বরেণ্য অতিথিবৃন্দ সহ মোট ১৮০ জন অংশগ্রহণ করেন।
সভায় জনাব অয়ন দেবনাথ, ক্যাম্পেইন লিড, সাইটসেভার্স বাংলাদেশ- বলেন, ভিপসের জন্মলগ্ন থেকেই সাইটসেভার্স বাংলাদেশ ভিপসের পাশে ছিল, বিভিন্ন ধরনের জাতীয় পর্যায়ের এডভোকেসি কার্যক্রমেও সাইটসেভার্স ও ভিজুয়ালী ইম্পেয়ার্ড পিপল্স সোসাইটি (ভিপস) যৌথভাবে কাজ করেছে । মারাকেশ ট্রিটি বিষয়ে তিনি বলেন বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মারাকেশ ট্রিটির অনুসমর্থন একটি আশীর্বাদ, এখন শুধু প্রয়োজন এই ট্রিটি কপিরাইট আইনে কার্যকর করা। তিনি অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতে ও নিবিড়ভাবে মারাকেশট্রিটি সহ জাতীয় পর্যায়ের যেকোনো এডভোকেসি কার্যক্রমে ভিপসের সাথে সাইটসেভার্স বাংলাদেশ একসাথে কাজ করার বিষয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী নাজরানা ইয়াসমিন বলেন- বাংলাদেশে মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থনে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও সংগঠনের ভূমিকা অপরিসীম। ২০১৯ সাল হতে ভিপস ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যৌথভাবে এফসিডিও এর অর্থায়নে “Strengthening Government Primary Education for Equal Rights of Learners and Teachers with Disabilities “ প্রকল্পের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থনে সক্রিয়ভাবে এডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যারই ফলশ্রুতিতে ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে বাংলাদেশ সরকার মারাকেশ ট্রিটি চুক্তি অনুসমর্থন করে । এখন প্রয়োজন এই চুক্তি কপিরাইট আইনে কার্যকর করা যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বই পড়ার স্বাধীনতা পায়। মারাকেশ ট্রিটি কপিরাইট আইনে বাস্তবায়নে এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধী-বান্ধব এডভোকেসি কার্যক্রমে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ভিপস আগামী দিনগুলোতেও একত্রে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে।
জনাব জাফর রাজা চৌধুরী, সাবেক রেজিস্ট্রার, কপিরাইটস, বাংলাদেশ কপিরাইট ডিভিশন তাঁর বক্তব্যে বলেন, কপিরাইট আইনে বলা আছে কোনো লেখকের অনুমতি ছাড়া তাঁর বই কেউ অন্য ফরমেটে তৈরি করতে পারবেনা অন্যান্যদের উপযোগী করে , তাহলে প্রতি বছর পৃথিবীতে যে এত লক্ষ লক্ষ বই ছাপা হয় সেগুলো পড়া থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বঞ্চিত থেকে যায়, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন।
মারাকেশ ট্রিটির মূল উদ্দেশ্য হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই বাঁধা অতিক্রম করা, এই ট্রিটি কপিরাইট আইনে বাস্তবায়ন করলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বই পড়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত হবে।
যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ সরকার জেনো কপিরাইট আইনে মারাকেশট্রিটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয় এই বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি ভিপসের সম্মানিত সদস্য এবং বার্ডোর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ সাইদুল হককে ২০২৩ সালে সমাজসেবা খাতে অবদানের জন্য একুশে পদক প্রাপ্তির জন্য শুভেচ্ছা প্রদান করেন।
জনাব ভাস্কর ভট্টাচার্য, ভিপসের সম্মানিত সদস্য এবং ন্যাশনাল কনসালটেন্ট এক্সেসেবিলিটি, এসপায়ার টু ইনোভেট প্রোগ্রাম (এটুআই), আইসিটি ডিভিশন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার- মারাকেশ ট্রিটি এমন এক ধরনের কপিরাইট পদ্ধতি বর্ণনা করে যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও পঠন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ছাপানো অক্ষরের প্রকাশিত বই একসেসিবল পদ্ধতিতে তৈরি করার বাঁধা সমূহ দূর করবে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, মারাকেশ ট্রিটি শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে কপি রাইট আইনে পরিবর্তন আনা আবশ্যক। যাতে করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহার উপযোগী বই তৈরির ক্ষেত্রে কপি রাইট কোন বাঁধা না হয় বা কপি রাইটের শর্তাবলী শিথিল করা হয়।
জনাব সাইদুল হক – ভিজুয়ালী ইম্পেয়ার্ড পিপল্স সোসাইটি (ভিপস) কে তাঁর একুশে পদক প্রাপ্তির জন্য সংবর্ধনা প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন তাঁর এই প্রাপ্তি একার নয় এই প্রাপ্তি সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের ।
জনাব মনসুর আহমেদ চৌধুরী বলেন- প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ভিপস- ফাউন্ডার ট্রাস্টি ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন বলেন- মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থন বাংলাদেশ সরকারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত এদেশের অপ্রতিবন্ধী মানুষদের ন্যায় প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ও সরকারের সমান দৃষ্টিভঙ্গির। বাংলাদেশে মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থনের পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষ এবং সংগঠনের প্রায় এক দশকের যৌথ প্রচেষ্টা ও আন্দোলন। এ আন্দোলন তখনই সার্থক হবে যখন তা কপিরাইট আইনে কার্যকর করা হবে।
বিশেষ অতিথি-যিনি প্রধান অতিথির প্রতিনিধিত্ব করেন- জনাব দাউদ মিয়া (এনডিসি) — রেজিষ্ট্রার অব কপিরাইটস (যুগ্মসচিব) বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস, শুরুতে ভিপসের সম্মানিত সদস্য এবং বার্ডোর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ সাইদুল হককে ২০২৩ সালে সমাজসেবা খাতে অবদানের জন্য একুশে পদক প্রাপ্তির জন্য শুভেচ্ছা প্রদান করেন।
মারাকেশ ট্রিটি অনুসমর্থন ও কপিরাইট আইনে এর বাস্তবায়ন বিষয়ে তিনি বলেন- বাংলাদেশে মারাকেশ ট্রিটি অনুস্বাক্ষর ও রেটিফাই হয়েছে এবং এর সাথে সামঞ্জস্য করে বাংলাদেশের কপিরাইট আইন তা প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত বলে তিনি জানান। তিনি তাঁর পূর্বের রেজিষ্ট্রার জনাব জাফর রাজা চৌধুরীকে মারাকেশ ট্রিটি বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। কপিরাইট আইন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী করে প্রণয়ন করার বিষয়ে তিনি সকলের মতামত ব্যক্ত করেন। এবং খুব শীঘ্রই কপিরাইট আইনে মারাকেশ ট্রিটি বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
ভিপসের সম্মানিত সদস্যরা সকলেই বাংলাদেশের কপিরাইট আইনে মারাকেশ ট্রিটির কার্যকারিতা বা বাস্তবায়ন এর জন্য প্রত্যাশায় রয়েছেন, তাঁরা তাঁদের বই পড়ার স্বাধীনতা থেকে আর বঞ্চিত থাকতে চাননা।